Skip to main content
 

ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিচার বিভাগ

আদি ও মধ্যযুগের বিচার বিভাগ 

সময় পেরিয়ে যায় নিজস্ব নিয়মে ,নদীর মতো শহর বয়ে যায় ছুটে যাওয়া মানুষ নিয়ে নিজস্ব স্রোতে । তবু,বাড়ির চৌকাঠ পেরোতে গিয়ে গল্প করতে করতে হঠাৎ একদিন ঢাকা পড়ে যায় সম্প্রীতি ,সালিশের সামিয়ানা দিয়ে শেষ করা যায়না স্বার্থের দ্বন্দ্ব। যেতে হয় আদালতের এজলাসে। বিচারকের রায়ে মিটে যায় সমস্যা । আবার দুপক্ষের নিবিড় আলাপ না হোক ,বিজনে হারায়না মানবিক অনুভূতি । বিপ্লবী উল্লাস কর আর ক্ষুদিরামের স্মৃতি বিজড়িত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিচার বিভাগের রয়েছে গৌরবের অর্জন এবং অন্তরায়ের বিরুদ্ধে সাহসী প্রচেষ্টার উদাহরণ ।  

 

মেঘনা, তিতাস, বগদিয়া ও ভৈরব নদী বিধৌত, আকাশী বিল ও শাপলা বিলের নান্দনিক সৌন্দর্যে সুহাসিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যা শিল্প-সাহিত্য ও শিক্ষা-সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহি সুপ্রাচীন একটি জেলা। তিতাস নদীর অববাহিকায় অবস্থিত এই জেলা চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত। এক সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বাংলাদেশের সমতট জনপদের একটি অংশ ছিল। তারপর বাংলায় পাল ,সেন রাজবংশের শাসনকালে তাদের বিচার ব্যবস্থা চালু ছিল।এর পর ১২০৪ সালে মুসলিমদের আগমন ঘটলে বাংলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধীরে ধীরে মুসলিম সুলতানদের শাসন শুরু হয়। সুলতানি আমলে বাংলার বিচারব্যবস্থায় সুলতান ছিলেন সর্বোচ্চ বিচারপতি। সপ্তাহের কয়েকটি বিশেষ দিনে সুলতান নিজে বিচারকার্য সম্পাদন করতেন। কাজীর অবস্থান ছিল সুলতানের নীচে। প্রধান প্রধান শহরগুলিতেও কাজী নিযুক্ত হতেন। গ্রামাঞ্চলে হিন্দুদের মধ্যে ‘পঞ্চায়েত ব্যবস্থা' প্রচলিত ছিল।

 

মোগল ও সুলতানি আমলে বাংলার স্বাধীন বারো ভূঁইয়া ঈসা খাঁ বাংলায় প্রথম এবং অস্থায়ী রাজধানী স্থাপন করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলে। বারো ভূঁইয়ারা বেশি দিন স্বাধীন ভাবে শাসন ভার পরিচালনা করতে পারেনিনি । আবার ও তা সুলতানদের কাছে চলে যায়। 

 

ব্রিটিশ পিরিয়ডে বিচার বিভাগ

এর পর বাংলায় ইংরেজদের আগমন ঘটলে ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা দেওয়ানী লাভের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ত্রিপুরাকে দুইটি অংশে বিভক্ত করে। অংশ দুটি হলো হলো ত্রিপুরা ও চাকলা রৌশনাবাদ। ১৭৮১ সালে সরাইল পরগনা ব্যতীত বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালী নিয়ে একটি জেলা ইংরেজরা গঠন করে এবং এর নাম দেয় টিপারা (Tippera) জেলা বা ত্রিপুরা জেলা। ত্রিপুরা জেলার দুটি পরিচয় ছিল। সাধারণভাবে ত্রিপুরা জেলা বলতে সমগ্র জেলাকে আর টিপারা প্রপার বলতে চাকলা রৌশনাবাদকে বোঝাত। তবে ইংরেজরা এ জেলাকে রোশনাবাদ ত্রিপুরা বলত। ১৭৮৯ সালে রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে এটিকে ত্রিপুরা জেলা হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে ত্রিপুরা জেলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অধিকাংশ এলাকা ময়মনসিংহ জেলার অর্ন্তভূক্ত ছিল। ১৮৩০ সালে সরাইল, দাইদপুর, হরিপুর, বেজুরা ও সতরকন্ডল পরগনা, ময়মনসিংহ হতে ত্রিপুরা জেলার কাছে হস্তান্তর করা হয়। ১৮৬০ সালে নাসিরনগর মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অধিকাংশ এর অধীনস্থ হয়। ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি প্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে পরগনার পরিবর্তে জেলা ও মহকুমা ব্যবস্থার প্রচলন করে । যার কারণে সরাইল পরগনা ভেঙ্গে দেয়া হয় । ত্রিপুরার তিনটি সাব-ডিভিশন থেকে নাসিরনগর মহকুমা সৃষ্টি হয় ১৮৬০ সালের ব্রিটিশ আইনে। ১১ বছর পর মহকুমা সদর নাসিরনগর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে স্থানান্তরিত হয়। মহকুমার নামকরণ করা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং ছয়টি থানা গঠিত হয়। যথা: ব্রাহ্মণবাড়িয়া , সরাইল, নাসিরনগর, নবীনগর, কসবা ও বাঞ্ছারামপুর। ১৮৭৫ সালে নাসিরনগর মহকুমার নাম পরিবর্তন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা করা হয়। 

 

ব্রিটিশ শাসনের শুরুর দিকে যখন মুঘল শাসনের কার্যকারিতা কমে যায় তখন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ১৭৭২ সালে অন্যান্য জেলার মতো তদানীন্তন ত্রিপুরা জেলায় একটি ফৌজদারী আদালত প্রতিষ্ঠা করে যেখানে একজন কাজী, একজন মুফতী ও ০২ জন মৌলভী নিয়োগ করা হয়। এর পাশাপাশি একটি দেওয়ানী আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয় যেখানে প্রাথমিকভাবে কালেক্টর বিচার করতেন। ১৭৭৪ সালেই সেটি পরিবর্তন করে দেওয়ানী আদালতের কার্যভার দেওয়া হয় স্থানীয় আমিন পদমর্যাদার বিচারকদের কাছে, ফৌজদারী আদালতের বিচারের ভার দেওয়া হয় থানাভিত্তিক ফৌজদারের উপর। ১৭৯৩ সালে তৃতীয় ও নবম রেগুলেশনের মাধ্যমে যথাক্রমে একজন দেওয়ানী জজ নিয়োগ করে তাকে ম্যাজিস্ট্রেসী ক্ষমতা দেওয়া হয়। কোম্পানীর শাসনের প্রথম থেকেই ত্রিপুরা জেলার বিচার ও প্রশাসনিক কার্য একই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত হতো। ১৮৩১ সালে দেওয়ানী মামলার বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা জজদের উপর ন্যস্ত করা হয়। ১৮৫৯ সালে এসে ম্যাজিষ্ট্রেট ও কালেক্টরের পদকে একত্র করা হয়।

 

১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে তদানীন্তন ব্রিটিশ সরকারের আমলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হলে ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের বর্তমান পৌরসভার পুকুরের যা কাচারী পুকুর নামে খ্যাত উত্তর পাশে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক বৃহৎ একতলা দালান নির্মাণ করে এবং উক্ত দালান টি আদালত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমার দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিচারকার্য ওই দালানে চালু করা হয়। একজন মুন্সেফ এর নেতৃত্বে দেওয়ানি বিচার কাজ পরিচালিত হতো এবং একজন সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট এর নেতৃত্বে ফৌজদারী বিচার কার্য পরিচালিত হতো ,যা ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিচার কার্য পরিচালনা হয়। তবে জেলার দায়রা বিচার কাজ তৎকালীন ত্রিপুরা বর্তমান কুমিল্লা থেকে পরিচালিত হতো। ১৮৭৭ সাল পর্যন্ত ত্রিপুরার জেলা জজ নোয়াখালীর জেলা জজ হিসেবে কাজ করেন। বিভিন্ন সময়ে ত্রিপুরা জেলার অধীনে বর্তমান কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলা যুক্ত ছিলো। ১৮৮৫ সালেই মূলত কুমিল্লা জেলা জজের বর্তমান পদটি সৃষ্টি হয় এবং তখন থেকেই তিনি জেলার ফৌজদারী ও দেওয়ানী বিচার বিভাগের এককভবে সর্বোচ্চ ব্যক্তি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জেলার সকল বিচারক এবং জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটসহ জেলার সকল প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটদের আপীল শুনতেন বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ।

 

 

পাকিস্তান শাসনামলে বিচারবিভাগ

১৯৪৭ পরবর্তী সময়ে বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্গত হয়। ১৯৬০ সালে ত্রিপুরা জেলার পূর্ব পাকিস্তান অংশের নামকরণ হয় কুমিল্লা জেলা। তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া একটি মহকুমা শহর নামে পরিচিত ছিল। 

 

আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ভাষা আন্দোলনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইন পরিবারের রয়েছে বীরত্বের ইতিহাস।১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সংশোধনী প্রস্তাব এনে বলেছিলেন -“ বাংলা ও পরিষদের সরকারি ভাষা রূপে গণ্য হবে”। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রামরাইলে জন্ম নেয়া এই আইনজীবী,রাজনীতিবিদ এবং তাঁর পুত্র দিলীপ কুমার দত্ত ২৯মার্চ,১৯৭১ দিবাগত রাতে পাকিস্তানি ঘাতকদের হাতে গ্রেপ্তার হন এবং ময়নামতি সেনানিবাসে নিয়ে অমানবিক অত্যাচারের পর তাঁদের নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়। তার পিতা জগবন্ধু দত্ত ছিলেন কসবা ও নবীনগর মুন্সেফ আদালতের সেরেস্তাদার।  

 

মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমার আইনজীবীগণ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার অনুপ্রেরণা জাগানিয়া সভা করেছেন । এর ই ভিত্তিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতিতে অ্যাডভোকেট আলী আজম ভূঁইয়ার নির্দেশে সমিতির ক্লার্ক বাবু সুশীল চন্দ্র কর ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতি হতে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন । যার ফলে পাকিস্তানি বাহিনী আইনজীবী সমিতি ভবনে আগুন লাগিয়ে সমিতির ৬০০০ মূল্যবান বই ও অতি গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র পুড়িয়েদেয়। সরাইলের কৃতি সন্তান - গণপরিষদের সদস্য আইনজীবী সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক । জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্য মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আব্দুল কুদ্দছ মাখন একজন আইনজীবী ও ছিলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার কৃতি সন্তান – আইনজীবী, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ,রাজনীতিবিদ সিরাজুল হক (বাচ্চু মিয়া) ছিলেন পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সদস্য এবং বাংলাদেশের সংসদ সদস্য।১৯৬৮ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে তিনি অন্যতম কৌসুলি ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা বিচার মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী ছিলেন, খুনী মোশতাককে তিনি ই প্রথম চোখে চোখ রেখে চ্যালেঞ্জ করে বলেছিলেন যে তিনি তার নেতৃত্ব মানেন না।

 

স্বাধীন বাংলাদেশের বিচার বিভাগ

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজ্ঞ আইনজীবীগণের এর প্রচেষ্টায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিকট থেকে সরকারি আর্থিক সাহায্য আনা হয়। পূর্বের জায়গায় স্থান সংকুলান না হওয়ায় পরবর্তীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালত ও চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট বর্তমান কাউতলী তে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৮৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে বৃহত্তর কুমিল্লা থেকে পৃথক করে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে নতুন জেলা ঘোষণা করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রথম জেলা ও দায়রা জজ ছিলেন জনাব মোঃ নজরুল ইসলাম। ২০০৭ সালে নির্বাহী বিভাগ থেকে ম্যাজিস্ট্রেসি পৃথক হওয়ার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রথম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন জনাব মো. হাদিউজ্জামান।

 

নবীনগর ও বাঞ্ছারামপুর চৌকি আদালত

সারাদেশে নিয়মিত আদালত ছাড়াও আরও এক ধরনেরর আদালত রয়েছে যাকে চৌকি আদালত বলা হয়। এই চৌকি আদালতগুলো উপজেলা বা থানা শহরে অবস্থিত।দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিশেষ করে যেসব উপজেলা থেকে জেলা শহরে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই কষ্টসাধ্য, সেসব উপজেলায় চৌকি আদালত দেখা যায়। সাধারণত অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল, সুবিধাবঞ্চিত, প্রান্তিক জনগণ, ব্যক্তিরা এসব চৌকি আদালত থেকে বিচার পান। যারা জেলা সদরে যেতে পারেন না, সে সব গরিব ও অসামর্থ্য মানুষের জন্য উপজেলা বা থানা পর্যায়ে চৌকি আদালত রয়েছে। ব্রিটিশ আমল থেকেই এসব আদালতের কার্যক্রম চলছে। এ আদালত প্রান্তিক জনগণের জন্য বড় ধরনের কাজ করছে।

 

বৃটিশ শাসনামলে ওয়ারেন হেস্টিংস এর সময়কার কথা। ঐ সময় অর্থাৎ ১৭৯৩ সালে এই বাংলায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা চালু হওয়ার পর জমিদাররা খাজনার জন্য গরীব প্রজা দের উপর নির্মম নির্যাতন চালাত। কখনো কখনো খরা,বৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি কারনে ফসল উৎপাদন কম হলে প্রজাদের পক্ষে খাজনা দেওয়া সম্ভব হত না। ফলে জমিদাররা নির্মমভাবে অত্যাচার করে প্রজাদেরকে শাস্তি দিত। জমিদারদের এমন অত্যাচার সহ্য না করতে পেরে কিংবা ভয়ে প্রজারা এক জমিদারের এলাকা ছেড়ে অন্য জমিদারের এলাকায় পালিয়ে যেত। জমিদাররা যেহেতু খাজনা আদায় করতে পারত না তাই তারা বৃটিশ সরকারকেও খাজনা দিতে পারত না। আর এসময় প্রজাদেরকে জমির স্থায়ী মালিকানা দেওয়া হত না। এমতাবস্থায় ১৮৮০ সালের দিকে ভূমি আইন সংশোধন করে প্রজাদেরকে জমির স্থায়ী মালিকানা দেওয়া হয়। এই সময়ে বৃটিশ সরকার খাজনা আদায়ের নিয়ম চালু করে। তবে কোন প্রজা যদি খাজনা দিতে না পারত তবে তাকে জমি থেকে উচ্ছেদ করা হত না। বরং খাজনা আদায়ের জন্য মামলা করার বিধান চালু করা হয়। আর খাজনা সংক্রান্ত মামলা পরিচালনার জন্য প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে এক ধরণের আদালত স্থাপন করা হয় যেটি চৌকি আদালত নামে পরিচিত। বৃটিশ আমলে মোট ১৪ টি চৌকি আদালত ছিল। প্রবরতীতে, যে সকল এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক সে সকল এলাকায় চৌকি আদালত গুলো রেখে দেওয়া হয়।

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার পূর্বাঞ্চলের ০৫টি ইউনিয়ন(বুড়ি নদীর পূর্বে) ত্রিপুরা রাজ্যের চাকলা রোশনাবাদ অঞ্চলের নূরনগর পরগনা হিসেবে এবং উত্তর দিকের মেঘনা-তিতাস-পাগলা নদী তীরবর্তী গ্রামগুলিকে সরাইল পরগনার আওতাধীন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র থেকে জানা যায়,১৮৭৫ সালে প্রথম নবীনগর থানা প্রতিষ্ঠিত করা হয়। একই সময়ে রছুল্লাবাদ গ্রামেও একটি পুলিশ ফাঁড়ি ছিল বলে জানা যায়। ১৯২৬ সালের ১৫ এপ্রিলের কলিকাতা গেজেটের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে রছুল্লাবাদ ফাঁড়িটি বিলুপ্তি হয়।ঐ সময় মোট ২৩৪ টি গ্রাম নিয়ে নবীনগর থানা পুনর্গঠিত হয়।

১৮৮৩ সালে নবীনগরে প্রথম মুন্সেফ আদালত চালু হয়।১৯৮৩ সালের ২৪মার্চ নবীনগর থানাকে আনুষ্ঠানিকভাবে উপজেলায় উন্নীত করা হয়।

 

নবীনগর শহরের আদালতপাড়ায় অবস্থিত, মুন্সেফ আদালত নামেও পরিচিত। এই দেওয়ানি আদালতগুলো মূলত অধস্তন বিচার বিভাগ বা নিম্ন আদালতের অন্তর্ভুক্ত। নবীনগর উপজেলার মানুষ সুবিধা ভোগ করেন এই আদালত থেকে। ১৮৮৪ সালে নির্মাণ করা হয় লাল রঙের সুন্দর এই ভবন।

 

ঐতিহ্যবাহী ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিচার বিভাগ নিরন্তর চেষ্টা করে চলেছে বিচার প্রার্থী মানুষের সহায় হয়ে উঠবার। তাতে বিভিন্ন প্রতিকূলতা থাকলেও এই জেলার বিচারকগণ মনে করেন যে সকল সমস্যা পেরিয়ে তারা মানুষকে বিশ্বাস করাতে সক্ষম হয়েছেন যে অপরাধীর বিচার সম্ভব এবং অত্যাচারিত এর পাশে তাদের ন্যায়ের কলম সচল থাকবে অপরাজেয় অঙ্গীকারে।  

তথ্য সূত্র

১. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন

২. বিচার বিভাগ বাতায়ন

৩. বাংলাপিডিয়া

৪. এস এম শাহনূর প্রণীত “নামকরণের ইতিকথা”

৫. দৈনিক প্রথমআলো

৬. ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির বার্ষিক স্মরণিকা

৭. উইকিপিডিয়া

৮. লিগ্যাল ভয়েস

 

সংকলন করেন- আফরিন আহমেদ হ্যাপী, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া